এমন কখনো কি হয়েছে আপনার সাথে? বাসা থেকে বের হয়ে, বেশ কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ মনে হলো, বের হবার সময় দরজার তালাটা ঠিকমত দিয়েছি তো? মনে হয়… ফিরে গিয়ে একবার চেক করে আসলে ভাল হতো। জিওফেন্স এর কথা ভাবছিলেন তিনি।
ঠিক এমন একটা দ্বিধা নিয়েই অফিস শুরু করলেন হাসান সাহেব। ফার্স্ট আওয়ারে মিটিং-এ ঢুকতে ঢুকতে আজকের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা খবরের শিরোনাম দেখে এই দ্বিধার শুরু।
“দেশে প্রতি বছরে প্রায় ৭০০ গাড়ি চুরি হয়”
এই শিরোনাম চোখে পড়তেই তাঁর মনে হলো, পার্কিং এ রেখে আসা গাড়িটার ডোর লক করেছিলেন তো! বছরে ৭০০ গাড়ি মানে, প্রতিদিন গড়ে চুরি হয় ২ টা গাড়ি! আর খবরের কাগজেও প্রায়ই গাড়ি চুরির খবর আসছে। যদিও তিনি নিজেকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন যে, ঠিকঠাক ডোর লক করেই এসেছেন। তাও মূল্যবান গাড়ির জন্য তাঁর বেশ টেনশন হলো!
কী করা যায়! ওদিকে মিটিংও শুরু হয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভারও আজ আসেনি। তাই গাড়ির সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে, তিনি একটি স্মার্ট বুদ্ধি আঁটলেন। পকেট থেকে মোবাইল বের করে, গাড়ি যে স্থানে পার্ক করে এসেছেন, সে স্থানের চারপাশে একটা দেয়াল তুলে দিলেন।
কিন্তু কীভাবে! হ্যাঁ, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এও সম্ভব! গাড়িতে থাকা ফাইন্ডার ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমের জিওফেন্স ফিচার ব্যবহার করে, মোবাইল অ্যাপ দিয়ে, ম্যাপের উপরে এরকম ভার্চুয়াল দেয়াল দেয়া সম্ভব! ট্র্যাকিং সিস্টেম সহ গাড়িটি যদি এই ভার্চুয়াল দেয়াল অতিক্রম করে বের হয় বা ভেতরে ঢোকে, তাহলে মোবাইলেই চলে আসবে নোটিফিকেশন! শধু গাড়ি না, বাইকেও এই সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। জিওফেন্স এমন একটি ফিচার যা মূলত গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) মাধ্যমে কাজ করে। অর্থাৎ গাড়ি যদি ম্যাপে সেট করা এরিয়ার বাইরে যায়, তাহলে গাড়িতে থাকা ডিভাইসের সিগনাল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাথে সাথে চলে আসে মোবাইলে। এটাই মূলত জিওফেন্স এর মুল কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল।
জিওফেন্স এর মাধ্যমে স্মার্টলি গাড়ির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পেরে, কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়েই হাসান সাহেব মিটিং শুরু করতে পারলেন।
যে কোনো সময়ে জিওফেন্স ব্যবহার করে, এরকম ভার্চুয়াল দেয়াল তোলার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি আগে থেকেই বিভিন্ন এরিয়াতে জিওফেন্স সেট করে দেয়ার সুবিধাও এতে রয়েছে। বাসার গ্যারেজ, শপিং মলের পার্কিং, এমনকি কারখানার ফ্লিট এরিয়াতেও জিওফেন্স তৈরি করে রাখা যায়। ম্যাপে মার্ক করা এইসব জায়গা থেকে গাড়ি ছেড়ে গেলে বা ঢুকলে, সাথে সাথেই নোটিফিকেশন আসবে। অর্থাৎ জিওফেন্সের মাধ্যমে নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি গাড়ির উপরে নজরও রাখা যায়। গাড়ি থাকে নিজের কন্ট্রোলে।
হাসান সাহেবের দৈনন্দিন জীবন যাপনকেও অনেকটা সহজ করে তুলেছে জিওফেন্স সিস্টেম ।
যেমন, যখন তাঁর স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে, ড্রাইভার স্কুল থেকে পিক করে বাড়ি পৌঁছে দেয়, সে খবর তিনি তখনই পেয়ে যাচ্ছেন মোবাইলে। কারণ বাসার গ্যারেজে আগে থেকেই, সবসময়ের জন্য জিওফেন্স সেট করা আছে। তাই গ্যারেজে যতবার গাড়ি ঢোকে, ততবারই তিনি হাতে থাকা মোবাইলে খবর পেয়ে যান। অর্থাৎ গাড়ির পাশাপাশি আপনজনের প্রতিদিনকার নিরাপত্তাও দিচ্ছে ফাইন্ডারের জিওফেন্স ফিচার।
বাসা ছাড়াও, যেসব কমন জায়গায় গাড়ি বারবার গমন করে, সেসব জায়গায়ও জিওফেন্স সেট করে রাখা যায়। আগে থেকেই নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখার মতো ব্যাপার। তাই একটা বাড়তি নিরাপত্তা সবসময়ই দিচ্ছে এই জিওফেন্স ফিচারটি।
শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নিরাপত্তাই নয়, কাজে কর্মে, ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রেও জিওফেন্স বেশ কাজের জিনিষ! প্রাইভাটকার মোটরবাইক ছাড়াও, সিএনজি, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, ডেলিভারি ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান এমনকি জাহাজের ক্ষেত্রেও এই সার্ভিস ব্যবহার করা যায়।
ফলে কারখানার নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট সিস্টমের নিরাপত্তা যেমন বাড়ছে, তেমনি গাড়িগুলো মালামাল নিয়ে কখন কারখানা ছেড়ে যাচ্ছে এবং কখন গন্তব্যে পৌঁছুচ্ছে, তাও মোবাইলেই জেনে যাচ্ছেন হাসান সাহেবের কারখানার ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার। এমনকি হাসান সাহেব নিজেও ফাইন্ডার অ্যাপে সেসব দেখতে পারছেন।
শুধু হাসান সাহেবই নন, একজন সিএনজি বা অটোরিকশা ব্যবসায়ী বা রেন্ট-এ-কারের মালিকও তাদের গাড়িগুলোর উপরে নজর রাখতে পারছেন সবসময়। সিএনজির গ্যারেজের চারপাশে জিওফেন্স সেট করে, সিএনজির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে নিচ্ছেন সিএনজির মালিক।
ডেলিভারি বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্যও জিওফেন্স বেশ চমৎকার কাজের জিনিষ। কখন কোন যানবাহন নিজস্ব এরিয়া থেকে ডেলিভারিতে যাচ্ছে, আবার কখন ফিরে আসছে তাও বুঝা যায় জিওফেন্স নোটিফিকেশনের মাধ্যমে।
অর্থাৎ বলাই যায়, জীবনের নিরাপত্তা তো বটেই, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা আর নিয়ন্ত্রণের- এই দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মদক্ষতা অর্জনে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সরাসরি সহযোগিতা করতে পারে জিওফেন্স বা ভার্চুয়াল দেয়াল।
পরোক্ষ ভাবেও এর উপকারীতা কম নয়!
ইনস্ট্যান্ট গাড়ির খবরাখবর জানা যাচ্ছে। সন্তান স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছে কিনা তা জানার জন্য হাসান সাহেবকে ফোনের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। বার বার একেক জন ড্রাইভারকে ফোন করে, তাঁর কারখানার ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজারকে খোঁজ নেয়া লাগছে না যে, গাড়িটি গ্যারেজে ফিরেছে কিনা। এসব ডাটা আবার রিপোর্ট আকারেও পাওয়া যায়। যা ট্রান্সপোর্ট বা ফ্লিট ম্যানেজারের কাজকে আরো সহজ করে দিয়েছে! সিএনজি, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরাও কয়েক ক্লিকেই খুব সহজেই জানতে পারছেন তাদের গাড়ির খবর। ফলে সময় তো বাঁচছেই, পাশাপাশি বেঁচে যাচ্ছে খরচও!
বর্তমান সময়ে, দেশে বিদেশে বহু ছোট-বড় কোম্পানি শুধুমাত্র ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করেই ট্রান্সপোর্ট কস্ট কমিয়ে, মুনাফা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিস ও জিওফেন্স তাদের ব্যবসার অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসবেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর ফাইন্ডারের জিওফেন্স ফিচারটি ব্যবহার করলে ট্র্যাকিং সার্ভিস হিসেবে লাইভ ট্র্যাকিং তো থাকছেই! গাড়ি কখন কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে, কত বেগে চলছে তা-ও যখন তখন জানা যাবে মোবাইল অ্যাপে।
মিটিং শেষ করে হাসান সাহেব অফিস থেকে বের হলেন। পার্কিং-এ গিয়ে সবার আগে গাড়ির লক চেক করে দেখলেন। তিনি ঠিকমতোই গাড়ি লক করে গিয়েছিলেন। তাও খবরের শিরোনাম দেখে তৈরি হওয়া দ্বিধা দূর করে, নিশ্চিন্তে ও সফলভাবে মিটিং সম্পন্ন করে বের হতে পেরেছেন ফাইন্ডারের জিওফেন্স ফিচারটির জন্য। কারখানা সামলানো হোক, কিংবা ব্যক্তিগত জিবনে, জিওফেন্স প্রযুক্তি তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপনকে করেছে আগের চাইতেও অনেক সহজ, নিশ্চিত, নিরাপদ এবং নির্ভার।