দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের মাধ্যম হিসেবে গাড়ি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দ্রুত এবং আরামে যাতায়াতের জন্য গাড়ির বিকল্প আর কি-বা হতে পারে। তাইতো সবার স্বপ্ন থাকে নিজের একটা ব্যক্তিগত গাড়ির। আবার অনেকে গাড়ি কিনে থাকে জীবিকার উৎস হিসেবে। ধারদেনা কিংবা লোনে গাড়ি কেনার মানুষের সংখ্যাও কম না। কেনার মাধ্যম যাই হোক, সবার কাছেই গাড়ির সুরক্ষাটা একটা বড় ইস্যু হয়ে থাকে। কারণ মোবাইল বা মানিব্যাগের মত গাড়ি তো আর একবারে সাথে সাথে রাখা যায় না। হঠাৎ করে হতেই পারে, পার্কিং বা গ্যারেজ থেকে আপনার শখের গাড়িটি উধাও।
চুরি, দুর্ঘটনা বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে গাড়ির সুরক্ষায় কাজ করে থাকে GPS ট্র্যাকার। GPS (Global Positioning System) ট্র্যাকার এমন একটি ডিভাইস যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান নির্ণয় করে থাকে। এটি লাইভ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গাড়ির নিখুঁত অবস্থান, গতি এবং অন্যান্য দরকারি তথ্য সরবরাহ করে থাকে। যা ব্যবহারকারিরা নিজেদের মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম আপডেট দেখতে পারেন। এটি গাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি গাড়ি পরিচালনাকেও সহজ করে দেয়। ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব, আপনার গাড়ির সুরক্ষায় জিপিএস ট্র্যাকার কেন প্রয়োজন।
১. চুরি প্রতিরোধ ও দ্রুত উদ্ধার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গাড়ি চুরি নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর অসংখ্য গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে গাড়িতে GPS ট্র্যাকার ইনস্টল(Install) করা থাকলে, গাড়ির লাইভ লোকেশন দেখে দ্রুত গাড়ি সনাক্ত করা যায়। রিমোটলি ইঞ্জিন অফ করে দেওয়া যায় এবং উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এছাড়াও জিও-ফেন্সিং সুবিধার মাধ্যমে গাড়ি নির্দিষ্ট এরিয়ার বাইরে গেলে তাৎক্ষণিক নোটিফিকেশন(Notification) পাওয়া যায়। দেশীয় কোম্পানি ফাইন্ডার ১৫০০+ চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধারে সহায়তা করেছে।
২. রিয়েল-টাইম লোকেশন ট্র্যাকিং
GPS ট্র্যাকার ব্যবহার করে গাড়ির রিয়েল টাইম অবস্থান দেখা সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার গাড়ি কোথায় যাচ্ছে, কত স্পিডে যাচ্ছে, সব দেখতে পারেন আপনার মোবাইলেই। শুধু যে ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায় তা কিন্তু না। ব্যবসার ক্ষেত্রেও ফ্লিটের সব গাড়ির ডাটা একসাথে দেখতে পারবেন। যখন আপনি আপনার গাড়ির অবস্থানের সঠিক ডাটা পাচ্ছেন তখন সুরক্ষা নিয়ে তো প্রশ্নই আসে না।
৩. জিও-ফেন্সিং সুবিধা
আপনি চাইলে নির্দিষ্ট এরিয়া সিলেক্ট করে দিতে পারবেন ট্র্যাকারের মাধ্যমে। যেমন, যদি মার্কেটে যান সেখানে পার্কিং এরিয়া যদি সিলেক্ট করে রাখেন তাহলে সে এরিয়ার বাইরে গেলেই সাথে সাথে মোবাইলে অ্যালার্ট চলে আসবে। এছাড়াও ডোর লক/আনলক ফিচার চালু থাকলে কেউ গাড়ির দরজা খুললে সেটাও জানতে পারবেন তাৎক্ষণিকভাবে। অর্থাৎ, গাড়ি পুরোপুরি আপনার নজরেই থাকবে GPS ট্র্যাকারের মাধ্যমে।
৪. ফুয়েল চুরি প্রতিরোধ
গাড়ির ফুয়েল চুরির ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। GPS ট্র্যাকারের মাধ্যমে ফুয়েলের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব। ফুয়েল মনিটরিং এর মাধ্যমে জানা যায় কত লিটার ফুয়েল লোড করা হয়েছে, কত লিটার খরচ হয়েছে, কত লিটার ড্রেইন হয়েছে সব দেখতে পারা যায়। ফুয়েলের এ টু জেড হিসাব পাওয়া যায় ফুয়েল মনিটরিং এর মাধ্যমে।
৫. বীমা সুবিধা ও আইনি সহায়তা
কার লোনের ক্ষেত্রে GPS ট্র্যাকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দূর্ঘটনা বা ঘটনার সময়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। অনেক ট্র্যাকার ডিভাইসে এসওএস(SOS) বাটন থাকে, যা জরুরি মুহূর্তে সহায়তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। এছাড়া এডভান্সড ক্যামেরা সল্যুশনে ভিডিও রেকর্ডিং-সহ প্রমাণ হাতের কাছে থাকে। ফলে বীমা প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং আইনি সহায়তাও খুব দ্রুত পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করলে গাড়ির সুরক্ষায় অবশ্যই GPS ট্র্যাকার প্রয়োজন। যখন আপনি আপনার কাছেই প্রযুক্তিগত সেবাটা পাচ্ছেন, সহজে গাড়ি পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন তাহলে কেন সে সুবিধা গ্রহণ করবেন না। ব্যক্তিগত ব্যবহার হোক বা কর্পোরেট প্রয়োজনে, GPS ট্র্যাকার আপনার গাড়ির জন্য একটি স্মার্ট বিনিয়োগ। তাই, আপনার গাড়িতে GPS ট্র্যাকার ইনস্টল করুন এবং নিশ্চিন্তে থাকুন।