চাকাবিহীন গাড়ি দেখছেন কখনো? নিশ্চয়ই নয়! চাকা বিহীন গাড়ি যেমন এগোতে পারে না, তেমনি সঠিক দিক নির্দেশনা ছাড়া কোন পরিকল্পনাই আলোর মুখ দেখে না। আপনি যদি একজন ফ্লিট ম্যানেজার হয়ে থাকেন, ওপরের কথাগুলো আপনার চেয়ে ভালো কেউ বুঝবে না। ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট একটা জটিল ও দূরুহ কাজ। আর এই জটিল কাজটি পরিচালনা করতে গেলে, আপনার প্রয়োজন একটি ভালো মানের জিপিএস ট্র্যাকার। আজকাল ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি ই জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করছে। জিপিএস ট্র্যাকার এর সাহায্যে ফ্লিটের গাড়িগুলোর রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং, রুট প্ল্যানিং, গতিবেগসহ সব ধরনের তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। আর তাই, জিপিএস ট্র্যাকার ছাড়া ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট অনেকটা চাকাবিহীন গাড়ির মতো!
একটি জিপিএস ট্র্যাকার ইন্সটল করার মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট বা ফ্লিট ম্যানেজাররা সময় ও খরচ -দু ই বাচাঁতে পারছেন।
ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট কি?
“ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট” মূলত একটি ফ্লিটকে সাশ্রয়ী ও দ্রুততম উপায়ে পরিচালনা করা বোঝায়। গাড়ির ব্যবহার ও ট্র্যাকিং, মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ, প্রেরণ ও রাউটিং কিংবা রুট প্ল্যানিং – এ সব ই একজন ফ্লিট ম্যানেজার কে পরিচালনা করতে হয়।
ফ্লিট ম্যানেজমেন্টে জিপিএস ট্র্যাকারের গুরুত্ব কতটুকু?
বর্তমানে জিপিএস ট্র্যাকার শুধুমাত্র যানবাহন চুরি ঠেকানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর সাহায্যে খুব সহজেই ব্যবসায়ের প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা ও বাড়ানো যায়। জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে রুট প্ল্যানিং, ফুয়েল মনিটরিং, ওভারস্পিড এলার্ট, লাইভ ট্র্যাকিং ও করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে, দেশে বিদেশে বহু ছোট-বড় কোম্পানি শুধুমাত্র ট্র্যাকিং সার্ভিস ব্যবহার করেই ট্রান্সপোর্ট খরচ কমিয়ে, মুনাফা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত, এটি ড্রাইভার এবং ফ্লিট ম্যানেজারদের জীবনকে আরো সহজ করে তোলে।
বাংলাদেশে ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার অভাবনীয় সাড়া ফেলেছে। আর এর পেছনে মূল কারণ ফ্লিট ম্যানেজমেন্টকে আরো সহজ করে দেওয়া। আপনি যদি ফ্লিট ম্যানেজমেন্ট বা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির কাজকর্ম চালাতে জিপিএস ট্র্যাকার খুঁজছেন, দেশে এখন ভালোমানের জিপিএস ট্র্যাকার পাওয়া যাচ্ছে।
১. রুট ট্র্যাকিং ও প্ল্যানিংঃ
একটি জিপিএস ট্র্যাকার আপনার কোম্পানির মালবাহি গাড়িতে ইনস্টল করা থাকলে, আপনি খুব সহজেই গাড়ি গুলো কোন রুটে যাচ্ছে তা দেখতে পাবেন। প্রায়শয়ই দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পণ্য ডেলিভারি করার বেশ কয়েকটি রাস্তা থাকে। ফ্লিট ম্যানেজাররা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন রাস্তা দিয়ে পণ্য ডেলিভারি করার জন্য ড্রাইভারকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কিন্তু, অনেক সময়েই ড্রাইভাররা ব্যক্তিগত কাজে বা সময় বাঁচাতে নির্দেশিত রুটে না গিয়ে অন্য রুটে যায়; যার কারনে পণ্য চুরি যাওয়া বা গাড়ির বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার ইনস্টল করা থাকলে, আপনি খুব সহজে গাড়িগুলোকে ট্র্যাক করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ড্রাইভার যদি নির্দেশিত রুটে না গিয়ে অন্য রুট বেছে নেয়, তা জানা যাবে মুহূর্তেই। তাই গাড়ি ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে জিপিএস ট্র্যাকার ই সেরা উপায়।
২. অ্যাপ এক, গাড়ি অনেকঃ
একটি জিপিএস ট্র্যাকিং এপ থাকা মানে আপনার ঝামেলার দিন শেষ। এক সাথে অনেক গুলো গাড়ি বা ফ্লিট ম্যানেজ করা খুবই দূরুহ কাজ। অথচ ফাইন্ডার জিপিএস ট্র্যাকার আপনি যখন ব্যবসায়ের গাড়িগুলোতে ইন্সটল করবেন, তখন আপনি একটি অ্যাপের মাধ্যমেই সবগুলো গাড়ি এবং গাড়িতে থাকা ড্রাইভার ও কর্মচারীর রিয়েল টাইম লোকেশন একসাথে মনিটর করতে পারবেন। গাড়িগুলো কোথায় যাচ্ছে, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে কি না, ব্যক্তিগত কাজে অন্য কোথাও সময়ক্ষেপণ করছে কিনা– তা প্রতি মুহূর্তে জানা যাবে। এতে করে আপনার প্রশাসনিক চাপ কমে যাবে; আপনার ব্যবসায়ের ও সমৃদ্ধি বাড়বে।
৩. গাড়ির নিরাপত্তা বাড়ায়ঃ
গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ফ্লিটের সব গুলো গাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। জিপিএস ট্র্যাকারের জিওফেন্স ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার গাড়ির পার্কিং এরিয়ার বাইরে একটি ভার্চুয়াল দেয়াল বা সীমানা সেট করে দিতে পারবেন। গাড়ি যদি ম্যাপে সেট করা এরিয়ার বাইরে যায়, তাহলে গাড়িতে থাকা ডিভাইসের সিগনাল স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাথে সাথে চলে আসে মোবাইলে। এটাই মূলত জিওফেন্স এর মূল কর্মপদ্ধতি বা কর্মকৌশল। শুধু গাড়ি নয়; মোটরবাইক, সিএনজি, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, ডেলিভারি ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান এমনকি জাহাজের ক্ষেত্রেও জিওফেন্স ব্যবহার করা যায়। জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়ি চুরির সম্ভাবনা কমে আসে।
৪. চুরি যাওয়া গাড়ি ও পণ্য উদ্ধারঃ
গাড়ির সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরেও আপনার সামান্য অমনোযোগীতায় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটেও যেতে পারে। আপনার কোম্পানি বা ব্যবসায়ের গাড়ি চুরি গেলে, সেটি আপনার জন্য বিরাট লস। গাড়ি চুরির সাথে সাথে গাড়ির ভেতরকার মালামাল ও হারিয়ে যেতে পারে। এটি আপনার ব্যবসায়ের জন্য বিরাট ক্ষতি। আপনি হয়তো এতে কাস্টমারের বিশ্বস্ততা হারাতে পারেন। এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ, যারা রপ্তানির জন্য পণ্য বোঝাই কাভার্ড ভ্যান বন্দরে যাওয়ার আগেই কৌশলে চুরি করে ফেলে। এত সব ঝামেলা থেকে কিন্তু মুক্তি পেতে পারেন গাড়িতে একটি জিপিএস ট্র্যাকার ইন্সটল করার মাধ্যমে। গাড়িকে ২৪/৭ মনিটর করার পাশাপাশি পণ্য চুরি যাওয়ার হাত থেকেও বাঁচাতে পারে। গাড়ি কোন কারনে হারিয়ে গেলেও রিয়েল টাইম লোকেশান ট্র্যাকিং এর সাহায্যে গাড়ি কে ট্র্যাক করতে পারবেন এবং গাড়ি ফিরে পাওয়ার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
৫. জ্বালানি খরচ কমায়ঃ
আপনার কোম্পানির লাভের একটা সিংহভাগ অংশই চলে যায় গাড়ির জন্য ব্যবহৃত জ্বালানি বা ফুয়েলের পেছনে। এই জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনলে আপনার ব্যবসায়ের খরচ কমে আসবে। আর এই কাজটি আপনি করতে পারবেন গাড়িতে ভেহিক্যাল ট্র্যাকার ব্যবহারের মাধ্যমে।
ফ্লিট ম্যানেজাররা ভেহিক্যাল ট্র্যাকার এর সাহায্যে গাড়ির যাবতীয় তথ্য (জ্বালানি খরচ, ফুয়েল কতটুকু ব্যয় হচ্ছে, কতটুকু রিফিল হচ্ছে) পেয়ে যান রিপোর্ট আকারে। এ রিপোর্ট এর মাধ্যমে পরবর্তীতে ফ্লিট ম্যানেজাররা রুট এনালাইসিস করে অপেক্ষাকৃত যে পথে গাড়ি চলাচল করলে জ্বালানি কম খরচ হয় সেই পথ গাড়ি চলাচলের জন্য বেছে নিতে পারেন।
৬. গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনঃ
জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকের সাথে ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছ সম্পর্ক তৈরি হয়। কেননা ব্যবসায়ী বা কোন কুরিয়ার কোম্পানি খুব সহজেই গ্রাহককে জানাতে পারে তাঁর পণ্যটি কোথায় আছে, কবে পৌঁছুবে, কোন কারনে দেরি হবে কি না– এইভাবে কাস্টমারের সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়ে যায়।
৭. কোম্পানির খরচ কমান, মুনাফা বাড়ানঃ
বর্তমান এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে বেশিরভাগ কোম্পানি ই খরচ বাঁচিয়ে অধিক মুনাফা প্রাপ্তির দিকে ঝুঁকছে।
ফ্লিট ম্যানেজারদের গাড়ির পেছনেই প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়; এর মেইন্টেইনেন্স এর রয়েছে আলাদা খরচ। একটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, গাড়ির পেছনে বেশিরভাগ খরচ ই কমিয়ে ফেলা যাবে গাড়িকে সঠিকভাবে মনিটরিং করে৷ যেমন, একটি টায়ারের কথাই ধরা যাক, একটি টায়ার তার বেঁধে দেয়া স্পিড লিমিট অতিক্রম করলে বাস্ট বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত ৮০ কিঃমিঃ এর বেশি বেগে গাড়ি চালালে টায়ার এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন করা লাগে। এটি খুবই ব্যয়বহুল একটা কাজ। একটি জিপিএস ট্র্যাকার এ ক্ষেত্রে বিরাট কাজে দেবে। এর সাহায্যে আপনার গাড়ি ড্রাইভার ওভারস্পিডে চালালেই ফোনে চলে আসবে নোটিফিকেশন; দূর থেকেও গাড়ির স্পিড কন্ট্রোল করা যাবে।
এ তো গেল টায়ারের খরচ। জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করে কোম্পানির কোন গাড়ি সময়ক্ষেপণ করছে কিনা, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছল কিনা– সবই ট্র্যাক করা যাবে। এতে করে ইনভয়েস ও বিলিং প্রসেস সঠিকভাবে করা যায়। তাছাড়া, কাজে ফাঁকি দেয়া কর্মচারীকে সহজে সনাক্ত ও করা যাবে। অযথা খরচ কমানোর পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও বেড়ে যায়।
বড় কোম্পানিগুলো তাদের গাড়ির ইন্সুরেন্স করান, যার পেছনে হিসেবের একটা বিরাট অংশ চলে যায়। তবে, অনেক ইন্সুরেন্স কোম্পানি ই ভেহিক্যাল ট্র্যাকার ব্যবহার করা গাড়ির জন্য ইন্সুরেন্স প্রিমিয়ামের উপর ডিসকাউন্ট দেয়। মানে ভেহিক্যাল ট্র্যাকার ব্যবহার করে গাড়ির শুধু নিরাপত্তা ই নয়, কোম্পানির মুনাফাও বাড়ানো যাবে!
বর্তমান এ প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে কোম্পানির মুনাফা বাড়ানো ছাড়া গতি নেই। আর এ কাজটি করা যাবে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে দিয়ে। তাই গাড়িতে ভেহিক্যাল ট্র্যাকার ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই। অনেকগুলো ট্র্যাকিং সার্ভিস বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত গাড়ির নিরাপত্তায় ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিস সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে ফাইন্ডার জিপিএস ট্র্যাকার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ফাইন্ডার বাংলাদেশে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য তাই ফাইন্ডারেই ভরসা রাখুন।