গত বছরের ঈদের ছুটি তখন শুরু। যে যার মতন বাড়ি ছুটে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার পেশাগত কারণে নিজের কাজের জায়গায় থাকছে। আমাদের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস প্রতিনিধিদের মধ্যেও তেমনি কয়েকজন অফিস করছিলেন। গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন ট্র্যাকিং(tracking) সেবা দিতে তাদের বিকল্পও নেই আর। একটু ঢিলেঢালা সময় কাটছে সন্ধ্যার পর। কাজের চাপও তেমন নেই। রাত ১২টা ৪০ মিনিটের এর দিকে একটা কল আসে। একটা ট্রাক ডাকাতি হয়েছে।
রাত তখন আনুমানিক রাত ১২থেকে ১২ টা ৩০মিনিট হবে। একটা কোরবানির গরুবোঝাই ট্রাক যশোর থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কাঁচপুর দিয়ে ঢাকার দিকে আসতেছিল। কিছু প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। একটু লাভের আশায় নিজেদের গরুগুলো এতদূর থেকে নিয়ে আসছিল। কিন্তু ট্রাকটা যখন কাঁচপুর ব্রিজটা টার্ন নিয়ে চট্টগ্রাম রোডে ঢুকছিল তখন চাঁদমহল সিনেমা হল থেকে অনেকটা দূরে ৮-১০টি বাইকে করে কমপক্ষে ১৫-১৬ জন দেশীয় অস্ত্রসহ মানুষ সামনে পিছনে এসে ট্রাকটা ঘিরে ফেলে। সেখানে ট্রাক ড্রাইভার এবং গরুর মালিক সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। মূলত গরুগুলোই ছিল তাদের টার্গেট। প্রায় ১০ লাখ টাকা সমমূল্যের গরু ট্রাকে। সেখান থেকে যদি ২-৩ টা গরুও নিতে পারে ২-৩ লাখ টাকা হয়ে যাবে। আর সবগুলো নিতে পারলে তো পুরোটাই পাবে।
ট্রাকের যিনি মালিক তিনি মূলত ফাইন্ডারের ক্লায়েন্ট। ড্রাইভার কোন এক ফাঁকে উনাকে জানাতে সক্ষম হয় যে ট্রাকটা হাইজ্যাক করা হয়েছে। গাড়ি তখনো মেইন রাস্তায়। ক্লায়েন্ট উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে ট্রাকের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন ফাইন্ডার অ্যাপ দিয়ে। সাথে মোবাইলে গাড়ির লাইভ লোকেশনও (live location) দেখতে থাকেন। ডাকাতরা একটু বিপাকেই পড়ে যায় এতে। কিন্তু দমে যায়নি। গরু নামানোর জন্য একটা যুতসই জায়গা খোঁজার চেষ্টায় ঠেলেই নিয়ে যেতে থাকে ট্রাকটা।
ফোনকলে ডাকাতির ঘটনা শুনে আমাদের টিম থেকে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার জন্য সাজেস্ট করা হয়। সেই সাথে ট্র্যাকিং(tracking) ডাটা ঠিকঠাক আসছে সেটাও নিশ্চিত হয়। ক্লায়েন্ট জানায় উনার পরিচিত একজন পুলিশ সদস্য আছে সেখানে। কাস্টমার সার্ভিস টিম থেকে পুলিশ সদস্যকে লাইভ লোকেশন পাঠানো হয় ট্রাকের। গাড়ি কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেসব দিকনির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ টিম নিয়ে সেখানে পৌঁছায় রাত ১টার দিকে।
ট্রাক তখন চাঁদমহল সিনেমা হলের সামনে। কোনভাবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাইক নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে ডাকাতরা। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও কাউকে আর ধরতে পারেনি। তবে ডাকাতির ৫০ মিনিটের মাথায় অক্ষতভাবেই গাড়ি, গরু এবং গরুর মালিকদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে রাত ১ টা ৩০ মিনিটের দিকে ড্রাইভার আবার গাড়ি চালু করে গন্তব্যের দিকে রওনা করে। ক্লায়েন্টের সাথে আমাদের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারের কর্মীরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।