Skip to content

Login |

একটা ৫ ঘণ্টার দুর্ধর্ষ অভিযান

৪ মার্চ, সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৭টা বেজে ৩০ মিনিট হবে। কাস্টমার সার্ভিসে নাইট শিফটে যারা আছেন তাদের ডিউটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপেক্ষা বাসায় ফেরার। চোখে ঘুমঘুম ভাব। এমন সময় হঠাৎ একটা কল। একজন এজেন্ট কলটা তুলেন,

  • হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। ফাইন্ডার কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি। কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
  • ভাই আমাদের একটা বাইক চুরি হয়েছে।
  • কিভাবে চুরি হয়েছে?
  • আমি আসলে ঠিক বলতে পারছি না। আমাদের বাইকের ইউজার যে উনি গ্যারেজে এসে দেখেন তালা ভাঙা, গাড়ি নেই। সম্ভবত রাতে চুরি হয়েছে।
  • আপনি আপনার মোবাইলে গাড়ি ট্র্যাক করতে পারছেন কিংবা গাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন?
  • হ্যাঁ, দেখতে পারছি। কিন্তু গাড়িটা আসলে আমাদের এক ইউজার ইউজ করে। আপনারা দেখেন কোনভাবে সাহায্য করতে পারেন কিনা।

সকালের চিত্র বদলে গেছে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে। সকালের সেই ঘুমোট ভাবটা কেটে গিয়ে তৎপরতা চলে এসেছে সবার মাঝে। গাড়ির অবস্থান জানতে কম্পিউটারের মনিটরে চোখ। গাড়ি চলছে। মনিটরে তা দেখা যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে গাড়ির সব রিপোর্ট ফাইন্ডার এজেন্টের সামনে। গাড়ির ইঞ্জিন অন-অফের রিপোর্ট অনুযায়ী ধরা হচ্ছে গাড়ি চুরি হয়েছে রাত ২টার দিকে। সে খবর এখানে এসে পৌঁছেছে সকালের দিকে। ব্যাপারটা একটু চিন্তারই বটে। তবে আশার কথা হচ্ছে ট্র্যাকার কাজ করছে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সমস্যা শুধু গাড়ি নিয়ে অনেকদূর চম্পট দিয়েছে চোর। দূরত্বের কারণে ক্লায়েন্টও গাড়ির কাছাকাছি যেতে পারছেন না দ্রুত। তাদের তরফ থেকে বলা হলো পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে। দায়িত্বরত এজেন্ট ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সাথে ঘটনার কথা জানালেন এবং গাড়ির বর্তমান লোকেশন শেয়ার করলেন। লোকেশন অনুযায়ী তারা ঝিনাইদহ থানার হেডকোয়ার্টারের নাম্বার শেয়ার করে যোগাযোগ করতে বলেন। নিয়ম মেনেই করা হতে থাকে সব। এরই মধ্যে মর্নিং শিফটে যারা ছিল তারা চলে এসেছে।

দায়িত্ব হাতে নিলেন ফাইন্ডারের নতুন একজন ডেডিকেটেড এজেন্ট। কম্পিটারের মনিটরে তখনো বাইকটা চলছে, মাঝে মাঝে দুয়েক জায়গায় বিরতি নিচ্ছে। ঝিনাইদহ থানায় একজন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলেন। পুলিশ এরই মধ্যে উভয়পক্ষের থেকে তথ্য ভেরিফাই করে চুরির সত্যতা বের করে কাজে নেমে পড়েছে। সেই সাথে গাড়ির ইউজারও বেরিয়ে পড়েছেন একজনকে নিয়ে। কিন্তু গাড়ির ইউজার গাড়ির লোকেশন দেখতে পারছিলেন না। উনার অফিসের অনুমতি নিয়ে তার ফোনে ফাইন্ডার অ্যাপ নামানোর জন্য বলা হলো এবং এখান থেকে এক্সেস দেওয়া হলো। এদিকে যার সাথে বেরিয়েছেন তার বাইকেও ফাইন্ডার ইন্সটল করা ছিল। ফলে ফাইন্ডারের এজেন্ট এবার চোর এবং ক্লায়েন্টের ইউজার দুজনের গাড়িই ট্র্যাক করতে পারছেন।

পুলিশের ফোনে ফাইন্ডার অ্যাপ না থাকায় তাদেরকে একটু পর পর লোকেশন পাঠিয়ে ঢাকা থেকেই সাহায্য করে যাচ্ছে ফাইন্ডার এজেন্ট। গাড়ির আপডেটেড লিংক পাঠানো হচ্ছে উনার ফোনে। সেই সাথে ম্যাপ দেখে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল কোন কোন রাস্তা দিয়ে গেলে দ্রুত ধরা যাবে। কিন্তু চোরও অনেক ধড়িবাজ। একটা লিড পাওয়া গেল ঝিনাইদহ পুলিশের থেকে। গাড়িটা যে রোড দিয়ে যাচ্ছিল সে রোডের সিগন্যাল আটকে দিলো কিছুক্ষণের জন্য। আশেপাশের পুলিশদেরও ইনফর্ম করা হয়েছে। গাড়ির মডেল, কালারসহ অন্যান্য তথ্য সবার সাথে শেয়ার করা হলো। সবাই প্রস্তুত ধরার জন্য, কিন্তু আশায় গুড়েবালি দিয়ে চোর অন্য একটা কানাগলি দিয়ে বেরিয়ে চুয়াডাঙ্গার দিকে চলে গেল।

ম্যাপে দেখাচ্ছে গাড়ি চলছে চিত্রা নদীর সাইড ধরে। ঝিনাইদহ থানা পেরিয়ে এবার চুয়াডাঙ্গা থানায় যোগাযোগ শুরু হলো। সেখানে যে এসআই কন্ট্রোল রুম থেকে তার নাম্বার নেওয়া হলো। নতুন করে আবার তথ্য দেওয়া শুরু উনাদের। চোর গায়ে বাতাস লাগিয়ে বাইক নিয়ে ছুটে চলছে চুয়াডাঙ্গা দাপিয়ে। সেখানে দুয়েক জায়গায় ব্লক করেও কোন সুফল মেলেনি। চোর কিভাবে জানি বের হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহ দু’জায়গাতেই ব্যর্থতার মুখ দেখতে হলো সবাইকে।

চক্কর দিতে দিতে বাইক এগিয়ে চললো আলমডাঙ্গার দিকে। আবার নতুন করে চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গার নাম্বার নিতে হলো। ম্যাপে এবার নতুন বিস্ময়ের দেখা মিললো। যে রাস্তায় বাইকটা আছে সেখানে একটা রেলক্রসিং আছে মেইনরোডের উপর দিয়ে। ট্রেনও আসছিল ঐ মুহূর্তে। সেই সাথে সেখানে পুলিশও ছিল প্রায় কাছাকাছি। যেহেতু ট্রেন যাবে এমনিতেই রাস্তা বন্ধ হচ্ছে আর পুলিশও যাচ্ছে ধরতে। বাইকটা তখনো রাস্তায় দাঁড়ানো ম্যাপে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে দাবার চাল বদলে ফেললো। ইউটার্ন নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল, মাত্র ৫মিনিটের জন্য আবারও হারাতে হলো তাকে। কিন্তু না, ফাইন্ডার তখনো কাজ করছে। ফাইন্ডার এজেন্ট দেখতে পারছে যে গাড়ি আবার সেই চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছে। আবার যোগাযোগ করা হলো সেখানের পুলিশদের সাথে। তাদের নতুন করে তথ্য দিতে দিতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। তখন আবার সেখান থেকে বেরিয়ে মেহেরপুরের গাংনি থানার আন্ডারে চলে গেল।

ক্লায়েন্টের গাড়ি তখনো বেশ দূরে। তারাও কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছেন না। ফাইন্ডার এজেন্ট চুয়াডাঙ্গা থানা থেকে আমরা আবার মেহেরপুর থানার নাম্বার নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করলো। সেখানে আবার দুইটা পুলিশ ফাঁড়ি। তো গাড়ি ছিল গাংনী থানার ভিতরে, অগ্যতা মেহেরপুর থানা থেকে গাংনী থানার নাম্বার নিতে হলো। এবার অনেকটা আশার দেখা মিললো আবার। গাড়িটা যে রোড দিয়ে যাচ্ছিল সে রোডের দিকে পুলিশকে যেতে বলা হলো যে গাড়িটা সেখান দিয়েই যাবে। একটা ফসলের মাঠের মাঝখান দিয়ে লম্বা রাস্তাটা চলে গেছে। ফলে অনেক দূর থেকে গাড়ি দেখা যায়। প্রথমবারের মত গাংনী থানার পুলিশদের চোখে ধরা পড়ে বাইকটা। ঐ রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। তাদের সাথে আবার মেহেরপুর থানার একজনও যুক্ত হয়। গাড়ি নিয়ে টহলরত ৩ জন পুলিশ এবার বাইকের পিছনে যায় এজেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী।

যেতে যেতে দেখা যায় রাস্তার পাশে একটা বড় মেহগনি বাগানের পাশে বাইকটা থামে। জায়গাটা বেশ নির্জন, নিরিবিলি। গ্রামের আরও কয়েকজন সেখানে ছিল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। বাইকের খোঁজে ফাইন্ডার এজেন্টের তথ্য অনুযায়ী ততক্ষণে পুলিশও চলে এসেছে সে বাগানে। বাইকের তথ্য মিলিয়ে বাইক ধরা হয়েছে।

কনফার্ম করেছে ফাইন্ডার এজেন্টকে। ক্লায়েন্টকেও জানানো হলো খবর। সেই সাথে ২জনকেও ধরা হলো। কিন্তু এখানে আরেক বড় ধাঁধার সৃষ্টি হলো। সন্দেহবশত ভুলে গ্রামের দুজনকে সাপপেক্ট ভেবে আটক করে পুলিশ অন্যদিকে গ্রামের মানুষ ভাবছিল হয়তো অন্য কারণে আটক করে থাকবে তাদের। বাইকের ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়ার পর মূল চোরদের ধরা হলো তাদের সহায়তায়। এর মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধস্তি হয়ে গেছে পুলিশের সাথে। তখন আবার তারা থানা থেকে আরও ফোর্স এনেছেন এবং দীর্ঘ ৫ঘন্টা একটা লম্বা সময়ের উদ্ধার অভিযানের পর বেলা ১২টার দিকে চোরসহ বাইক পাওয়া যায় পুলিশের সহায়তায়।

গাড়ির নিরাপত্তায় ফাইন্ডার সম্পর্কে জানতে