আপনার ব্যাবহৃত প্রাইভেট কারটিতে কি আপনি করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ? করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ব্যাবহার পরিহার করার কথা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হওয়ার কারনে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলেই এমন কথা বলা।
প্রতিদিন এখানে ওখানে আসা যাওয়া করার ফলে আপনি বুঝতেই পারবেন না আদৌ আপনার গাড়িটি ভাইরাস মুক্ত আছে কিনা। গাড়ি বিশেষজ্ঞদের মতে আপনার ব্যাবহারের ব্যাক্তিগত গাড়িটিরও প্রয়োজন প্রতিদিন স্যানিটাইজেশনের। প্রতিদিন নিয়ম করে গাড়ির কিছু পয়েন্ট পরিষ্কার এর মাধ্যমে গাড়ির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।
গাড়ির ভেতর ও বাহির পরিষ্কারের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজেশানের যেকোন কিছুই ব্যাবহার করা উচিৎ না। এতে গাড়ির বিভিন্ন অংশের ক্ষতি হতে পারে।
গাড়ি কখন কোথায় যাচ্ছে খেয়াল রাখুন
আপনি যতক্ষণ গাড়ির সাথে আছেন ততক্ষণ নাহয় গাড়ির খেয়াল রাখতে পারছেন। কিন্ত আপনার চোখের আড়ালে গাড়ি অন্য কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না কিংবা পথে কোন যাত্রী উঠছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাঝতে হবে। নিজের পরিবারের বাইরের কেউ যদি গাড়িতে ওঠে তাহলে পাবলিক আর প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট এর মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়? তাই গাড়ি কখন কোথায় যাচ্ছে কোন পথে চলছে, গাড়ির ভেতরে কে আছে, কী কথা বলছে সবকিছুই আপনার জানা প্রয়োজন। এসব জানতে হলে গাড়িতে ফাইন্ডার জিপিএস ট্র্যাকার রাখুন। জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে গাড়ির গতিবধি থাকবে আপনার নজরের মধ্যেই।
গাড়ি স্যানিটাইজ করতে ব্যাবহার্যঃ
১। এলকোহলঃ গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিগুলো গাড়ির ভেতরের অংশ পরিষ্কার করতে এলকোহল ব্যাবহার করে থাকেন। এতে জীবাণু যেমন কার্যকরী উপায়ে হ্রাস পায় সাথে সাথে গাড়িরও কোন ক্ষতি হয় না। এলকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার দিয়েও গাড়ির ভেতর পরিষ্কার করা যায়।
২। সাবান-পানিঃ সাধারন গোসল করার সাবান সব বাসায়ই থাকে। সেই সাবান এবং পানি দিয়েই মুছে গাড়ির ভেতর ও বাহির পরিষ্কার করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে গাড়ির ভেতরে বেশি পানি ব্যাবহার করা যাবেনা। পানি জমে থাকলে বিভিন্ন অংশে ফাংগাস অথবা দূর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।
সকল পয়েন্ট পরিষ্কার করতে হবেঃ
১। স্টিয়ারিং হুইলঃ গবেষনায় দেখা যায় স্টিয়ারিং হুইলে একটি সাধারন কমোড থেকে চারগুন বেশি জীবাণু জমে থাকতে পারে। অতএব স্টীয়ারিং হুইল পরিষ্কার করা ভাইরাস মুক্ত থাকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
২। ড্রাইভিং এরিয়াঃ ড্রাইভিং সিট এবং এর আশপাশের অংশ এমনকি দরজার হাতল পর্যন্ত ভালোভাবে এলকোহল, স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নিতে হবে।
৩। সামনের প্যাসেঞ্জার সিটঃ সামনের প্যাসেঞ্জার সিট এবং এর আশ পাশ ভালোভাবে স্যানিটাইজ করতে হবে। প্যাসেঞ্জার সিটের সামনের গ্লোভ কম্পার্টমেন্ট এরিয়াও ভেতর ও বাইরে থেকে পরিষ্কার রাখা জরুরী।
৪। পেছনের সিটঃ পেছনের সিট ও এর সংলগ্ন কাপ হোল্ডার, দরজার হাতল, সিট কভার, জানালার গ্লাসের সুইচ, কেবিন লাইট ইত্যাদি যত্ন সহকারে স্যানিটাইজ করতে হবে।
৫। সিটবেল্টঃ সিটবেল্ট পরিষ্কার কথা অধিকাংশ মানুষই ভুলে যান। কিন্তু সিট বেল্ট এর মাধ্যমেও জীবাণু ছড়ানো অসম্ভব কিছু না।
৬। বনেটঃ বনেট এবং এর সংলগ্ন যেসব এলাকা বিভিন্ন সময় ধরা হয়ে থাকে সেসব জায়গা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৭। বুটঃ বুট এর ভেতর বাহির, পার্সেল শেলফ, স্পেয়ার হুইল কম্পার্টমেন্ট ইত্যাদি খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
৮। গাড়ির চাবিঃ গাড়ির চাবিটিও প্রতিদিন নিয়ম করে পরিষ্কার করা জরুরী।
গাড়ি স্যানিটাইজ করার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ
গাড়ির ভেতরে কোন প্রকার ব্লিচিং পাউডার বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড জাতীয় পদার্থ ব্যাবহার করা যাবেনা। এতে গাড়ির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমোনিয়া বেজড ক্লিনার ব্যাবহার থেকেও বিরত থাকা উচিৎ। ঘরের কাঁচ পরিষ্কার করার জন্য গ্লাস ক্লিনার এর ব্যাবহার খুবই জনপ্রিয়। তবে গাড়ির কাঁচের ক্ষেত্রে গ্লাস ক্লিনার ব্যাবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সবাই। এতে গাড়ির কাঁচের ক্ষতি হয়।
গাড়ি স্যানিটাইজ করার সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস ব্যাবহার করতে হবে। পরিষ্কার করা শেষে গ্লাভসটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে যেনো এর থেকে জীবাণু না ছড়ায়।
নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখার মাধ্যমে গাড়ির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে দূরে থাকুন।