বাংলাদেশে বর্ষাকাল মানেই হুটহাট বৃষ্টি, জলাবদ্ধ রাস্তাঘাট। বেড়ে যায় ট্র্যাফিক জ্যাম আর দুর্ঘটনা হার। গাড়ি চালানোর মধ্যে থাকে বাড়তি ঝুঁকি। তাই গাড়ি চালকদের একটু বাড়তি সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলা উচিৎ।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব বৃষ্টিতে নিরাপদে গাড়ি চালানোর ৭টি জরুরি সতর্কতামূলক টিপস, যা বাংলাদেশের রোড কন্ডিশন ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১. গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন
বৃষ্টির দিনে রাস্তাগুলো সাধারণত পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। পানির কারণে টায়ারের গ্রিপ কমে যায়, ফলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। তাই কাজের গতি যতই থাকুক, গাড়ির গতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজা রাস্তায় ২০–৩০% ধীর গতিতে চালানোই সবচেয়ে নিরাপদ। বেশি গতি মানেই হাইড্রোপ্ল্যানিংয়ের (Hydroplaning) ঝুঁকি বাড়ানো। তাই বৃষ্টিতে পরিমিত গতিতে গাড়ি চালান।
২. ওয়াইপার ও হেডলাইট ব্যবহার করুন
বৃষ্টির দিনে গাড়ি চালানোর সময় পরিষ্কার দৃষ্টিই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। কিন্তু অনেক চালকই ওয়াইপার ঠিকমত ব্যবহার করে না। অনেক সময় ওয়াইপারের ব্লেড পুরনো হওয়ার কারণে সেটি আরও সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই বর্ষাকালের আগে এটির দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার। সেই সাথে বৈরি আবহাওয়ায় হেডলাইট অন রাখাও জরুরি। হেডলাইট অন থাকলে সেটি আপনাকে অন্য চালকদের কাছে দৃশ্যমান করে রাখে।
৩. জলাবদ্ধ রাস্তায় সাবধানে চালান
ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্যান্য শহরগুলোতে হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই পানির নিচে গর্ত, ম্যানহোল কিংবা এমন কিছু থাকতে পারে যা মুহূর্তেই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই জলাবদ্ধ রাস্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যতদূর সম্ভব অন্যদের অনুসরণ করে গতি কম রেখে সাবধানে গাড়ি চালান। আবার রাস্তায় অতিরিত পানি থাকলে তা ইঞ্জিনে ঢুকে ইঞ্জিন বিকল করে দিতে পারে। তেমন কিছু মনে হলে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন।
৪. টায়ার ও ব্রেক সিস্টেম নিশ্চিত করুন
ভেজা রাস্তায় সবচেয়ে বড় ভরসা হলো টায়ারের ট্রেড ও ব্রেক সিস্টেম।
- টায়ার পুরনো হয়ে গেলে রাস্তায় গ্রিপ কমে যায়
- ব্রেক প্যাড বা ডিস্ক দুর্বল হলে ব্রেক ধরতে সময় বেশি নেয়
বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে সেগুলো একটু চেক করে নিন। অবস্থা বুঝে নিয়ন্ত্রিত ড্রাইভিং করুন। অযথাই ঝুঁকি নিতে যাবেন না।
৫. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
বৃষ্টির দিনে গাড়ি থামাতে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি সময় লাগে। তাই সামনে চলা গাড়ির সঙ্গে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন। কমপক্ষে ৩-৫ সেকেন্ডের ড্রাইভিং গ্যাপ রাখলে বিপদের সময় আপনি নিরাপদে থামতে পারবেন।
৬. এসি কিংবা ডিফগার চালু রাখুন
বৃষ্টিতে গাড়ির ভিতরের কাচ ঘোলাটে হয়ে যায়, যা দেখার ক্ষেত্রে কিছুটা বাঁধার সৃষ্টি করে। অনেকেই আমরা হাত দিয়ে মুছে ফেলি, যেটা না করাই ভালো। এসি(AC) কিংবা ডিফগার (Defogger) চালু করে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গ্লাস বেশি ঝাপসা হলে কিংবা এসি কাজ না করলে দুই দিকের কাচ নামিয়ে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট রাখলেও কাজ হয়ে যায়।
৭. হঠাৎ ব্রেক বা স্টিয়ারিং পরিবর্তন এড়িয়ে চলুন
বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ ব্রেক চাপা বা স্টিয়ারিং ঘোরালে গাড়ি স্লিপ করে সাইডে বা অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে গতি কমান, সময় নিয়ে লেন পরিবর্তন করুন। অবশ্যই ইন্ডিকেটর(Indicator) চালু রাখুন।
বৃষ্টি আমাদের দেশের একটি স্বাভাবিক মৌসুমি বাস্তবতা। কিন্তু একটু সচেতনতা আপনাকে ও আপনার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। স্মার্ট ড্রাইভিং মানে শুধু দক্ষতা নয়, বরং সময় ও পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও। তাই বৃষ্টির দিনে একটু দেখেশুনে, সাবধানে গাড়ি চালান।