গাড়ি কেনার শখ কার না থাকে। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গাড়ির প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। একটা ব্যক্তিগত গাড়ির স্বপ্ন সবারই থাকে। অনেকেই আবার রোজগারের মাধ্যম হিসেবেও গাড়িকে বেছে নেয়। গাড়ি কেনার সময়টাতে একটা দ্বিধায় সবাইকেই পড়তে হয়। কোথায় থেকে কিনবে? ডিলারশিপ(car dealership)থেকে নিলে ভালো হবে নাকি প্রাইভেট সেলার? কোনটার কি সুবিধা-অসুবিধা সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করে।
মূলত দুই ক্ষেত্রেই কিছু সুনির্দিষ্ট সুবিধা ও অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোনটি আপনার জন্য সেরা হবে তা নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন, বাজেট, পরিস্থিতির উপর। ব্লগের বিশ্লেষণ থেকে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।
কার ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কেনার সুবিধাঃ
১.গুণগত মান এবং নির্ভরযোগ্যতা
কার ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কেনার মানে হচ্ছে আপনি একটি প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বস্ত সূত্র থেকে গাড়িটি কিনছেন। এর বড় সুবিধা হচ্ছে নির্ভরযোগ্যতা। তারা সাধারণত বড় পরিসরে গাড়ি বিক্রি করে থাকে। গাড়ির সার্ভিস এবং ডকুমেন্টেশন সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব তথ্যই ক্রেতাদের দিয়ে থাকে। যা গাড়ির গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা দেয়। তাদের সেবার ওপর নির্দিষ্ট নিয়ম এবং প্রক্রিয়া থাকে।
২. ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবা
ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কিনলে আপনি আপনার গাড়ির ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবাটা পাবেন। নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে সেটা তো থাকেই, আবার অনেক সময় দেখা যায় পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট মেয়াদে ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। গাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিলে সার্ভিসিং সেবাটা নিশ্চিত করে। যেটা গাড়ির যন্ত্রাংশের/ ইঞ্জিনের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৩. নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন
লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কেনা নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত। এখানে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। লেনদেন এবং ডকুমেন্টশনে স্বচ্ছতা থাকে। পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকানা, অ্যাকসিডেন্ট রিপোর্ট এসব সহজেই যাচাই করার সুযোগ থাকে।
৪. লোন/ঋণের সুবিধা
বাজেট নিয়ে টানাপোড়ন থাকলে ডিলারশিপে অনেকটা সুবিধা পাওয়া যায়। অনেক ডিলারশীপ আছে যারা ঋণের সুবিধাটা দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে সহজ কিস্তিতে গাড়ি কিনতে পারবেন। অনেক সময় ব্যাংক বা অন্যান্য ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠানের সাথেও চুক্তি থাকে তাদের যার মাধ্যমে আপনি গাড়ির জন্য সহজে লোন নিয়েও কিনতে পারবেন। অনেকে আবার ট্রেড-ইন সুবিধাও রাখে। যার মাধ্যমে পুরনো গাড়ির বিনিময়ে ক্রয়কৃত গাড়ির উপর নির্দিষ্ট ছাড় পেতে পারেন।
৫. গাড়ি বাছাইয়ের অপশন বেশি
ডিলারশিপে গাড়ির কালেকশন অনেক বেশি থাকে। নতুন থেকে শুরু করে ব্যবহৃত গাড়ির মধ্যে বিভিন্ন মডেল, কালার এবং কনফিগারেশন দেখা যায়। ফলে আপনার পছন্দসই গাড়ি বেছে নিতে সহজ হয়। তাছাড়া ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কেনার পর রেজিস্ট্রেশন(registration), ইন্সুরেন্স(insurance) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে কার ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও আছে।
১. বেশি দাম
ডিলারশিপ থেকে গাড়ি কিনলে সেখানে দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হতে পারে সাধারণত। অনেক সময় অতিরিক্ত চার্জ বা ফি আরোপ করা হয় গাড়ির উপর। সার্ভিসিং ও অন্যান্য খরচ যোগ করার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিক্রয় চুক্তি ও শর্তগুলোর ওপর কাস্টমাইজেশনের সুযোগও কম থাকে।
২. প্রচারমূলক চাপ (Promotional Pressure)
ডিলারশিপে প্রায়ই বিভিন্ন অফার কিংবা প্যাকেজে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। যা অনেক সময় আপনাকে বাজেটের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। বিক্রয় প্রতিনিধিরা বিশেষ ছাড়, অগ্রিম বুকিং ইত্যাদি দিয়ে ক্রেতাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে।
প্রাইভেট সেলার থেকে গাড়ি কেনার সুবিধাঃ
১. কম দাম
প্রাইভেট সেলার থেকে গাড়ি কেনার বড় সুবিধাটা মূলত বাজেটের ক্ষেত্রে। এখানে সাধারণত ডিলারশিপের থেকে তুলনামূলক কম দামে গাড়ি কেনা যায়। মধ্যস্থতাকারী কিংবা ডিলারশিপ চার্জটা এখানে না থাকার কারণে দাম কিছুটা কমে আসে। অপরদিকে এখানে দর-কষাকষির করারও একটা সুযোগ থাকে। ফলে অনেকটা সাশ্রয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. দ্রুত এবং সরাসরি লেনদেন
প্রাইভেট সেলারের থেকে গাড়ি কেনার প্রক্রিয়াটি ক্রেতার সাথে বিক্রেতার সরাসরি হয়ে থাকে। কাগজপত্রের ঝামেলা কম থাকার কারণে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। লেনদেনের প্রক্রিয়াও তুলনামূলক কম সহজ এবং সমসাপেক্ষ হয়ে থাকে। আপনি সরাসরি সেলারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৩. ব্যক্তিগত চুক্তি
প্রাইভেট সেলারদের সাথে অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ লেনদেন হয়ে থাকে। দর-কষাকষির সাথে ব্যক্তিগত শর্ত জুড়ে দেওয়া যায় কথা বলে। তাদের সাথে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে চুক্তির সুযোগ থাকে। গাড়ির অবস্থা এবং মূল্য নিয়ে আলোচনা অনেকটা সহজ হয় এতে।
প্রাইভেট সেলারদের কাছ থেকে গাড়ি কেনার কিছু সুবিধা থাকলেও সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু অসুবিধা এবং ঝুঁকি থাকে। প্রাইভেট সেলার থেকে গাড়ি কেনার অসুবিধাঃ
১. ওয়ারেন্টি নেই
প্রাইভেট সেলারদের থেকে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত তারা কোন ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেয় না। সেই সাথে বিক্রয়োত্তর যে সেবা সেটাও পাওয়া যায় না। যার ফলে কেনার পর গাড়িতে কোন সমস্যা হলে মেরামতের খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়।
২. গাড়ির ইতিহাস যাচাই করা কঠিন
প্রাইভেট সেলারদের কাছ থেকে গাড়ির ইতিহাস যাচাই কঠিন হয়ে থাকে। তারা সাধারণত গাড়ির সঠিক তথ্য সামনে আনতে চায় না। গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট রিপোর্ট, সার্ভিসিং রেকর্ড, ইঞ্জিনের অবস্থা ইত্যাদি গোপন রাখার চেষ্টা করে।
৩. নিরাপত্তার ঝুঁকি
প্রাইভেট সেলারদের থেকে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লেনদেনের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকিও থাকে অনেক সময়। গাড়ি সাধারণত সার্টিফাইড(certified) থাকে না। সঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই না করে নিলে গাড়ির অবস্থা, ডকুমেন্টেশন(documentation) সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন হতে পারে। ভবিষ্যতে ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকে যায়।
গাড়ি কেনার সময় কার ডিলারশিপ এবং প্রাইভেট সেলার উভয়েরই বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। কোনটি আপনার জন্য সেরা হবে তা নির্ভর করছে আপনার প্রয়োজন, বাজেট এবং কেনার ঝুঁকির উপর। ডিলারশিপ থেকে কিনলে দাম কিছুটা বেশি পড়লেও আপনি নির্ভরযোগ্যতা, ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবাটা পাবেন। অন্যদিকে প্রাইভেট সেলারের থেকে দাম কম পড়লেও নিরাপত্তা এবং সঠিক তথ্য পাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আপনার চাহিদা এবং বাজেট অনুযায়ী কোনটা আপনার জন্য সুবিধাজনক সেটা এখন আপনি নিজেই বেছে নিতে পারেন।