গাড়ির হেডলাইট অন্ধকারে যেমন পথ দেখায় তেমনি গাড়ির সৌন্দর্যকেও বাড়িয়ে তোলে। আবার এই হেডলাইটের আলোর ভুলভাল ব্যবহার দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হেডলাইটের তীব্র আলো বিপরীত দিক থেকে আসা মানুষ কিংবা গাড়িকে বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে এবং ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। সেই সাথে হেডলাইটের সমস্যা থাকলে কিংবা কাজ না করলেও একই ব্যাপার ঘটতে পারে। তাই গাড়ির হেডলাইটের যত্ন এবং আলোর নিয়ন্ত্রণ দুটোই দরকারি গাড়ির জন্য।
ব্লগে আমরা সেসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।
গাড়ির হেডলাইটের যত্নের সহজ উপায়ঃ
১. হেডলাইট পরিষ্কার রাখাঃ
হেডলাইটের লেন্স ঘোলাটে হলে তা পরিষ্কার করা জরুরি। ঘোলাটে থাকলে তা ঠিকমতো আলো ছড়াতে পারে না। গাড়ি ধোয়ার সময় হেডলাইট পরিষ্কারের দিকেও মনযোগ দিতে হবে। ঘরে থাকা সহজ উপরকরণ ব্যবহার করেই তা পরিষ্কার করা যায়ঃ
– হালকা সাবান ও পানি দিয়ে হেডলাইট ধুয়ে নিতে পারেন। কার সোপ ব্যবহার করতে পারেন।
– মাইক্রোফাইফার কাপড় দিয়ে ধীরে ধীরে ময়লা মুছে ফেলতে পারেন।
-ঘোলাটে ভাব দূর করতে বাজারে সহজলভ্য হেডলাইট রিস্টোরেশন কিট ব্যবহার করতে পারেন।
২. হেডলাইট পলিশ করাঃ
হেডলাইট পলিশের ক্ষেত্রে স্যান্ডপেপার, পলিশিং পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। গাড়ির পেইন্টের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে হেডলাইটের চারপাশে টেপ লাগিয়ে নিতে পারেন। একদম শেষে কাপড়ের তোয়ালে বা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মসৃণভাবে পলিশ করতে পারেন। ঠিকঠাক পলিশ হেডলাইটের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলে।
৩. হেডলাইটের বাল্ব পরিবর্তন করাঃ
সময়ের সাথে সাথে হেডলাইটের বাল্বও তার কার্যকারিতা হারাতে শুরু করে। আলোর উজ্জ্বলতা কমে যায় বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী তা পরিবর্তন করা উচিৎ। বাজারে অনেক ধরনের হেডলাইট পাওয়া যায়, যেমন হ্যালোজেন, এলইডি, এবং এইচআইডি হেডলাইট। আপনার গাড়ির জন্য সঠিক হেডলাইট বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হেডলাইটের আলোর সঠিক নিয়ন্ত্রণ যেভাবে করবেনঃ
গাড়ি চালানোর সময় হেডলাইটের আলোর সঠিক নিয়ন্ত্রণ নিজের জন্য এবং অন্যান্য চালকদের নিরাপত্তায় জরুরি। নাহলে যেকোন সময়, যেকোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বড়সড় ক্ষতি হতে পারে আপনার নিজের এবং গাড়ির।
১. লো এবং হাই বীমের সঠিক ব্যবহারঃ
গাড়ির হেডলাইটের হাই বীম এবং লো বীমের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাতে ড্রাইভিং করার সময় অন্যান্য ড্রাইভারদের বিভ্রান্ত করা বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বা যানজটপূর্ণ এলাকায় লো বীম ব্যবহার করা উচিত। শুধুমাত্র খোলা রাস্তা বা হাইওয়েতে যেখানে বিপরীত দিক থেকে গাড়ি আসছে না, সেখানে হাই বীম ব্যবহার করা উচিত।
২. সঠিকভাবে হেডলাইট অ্যাডজাস্টঃ
হেডলাইটের আলো যদি সঠিক কোণে না থাকে, তবে এটি সামনে থাকা গাড়ি বা পথচারীদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। গাড়ি সার্ভিসিংয়ের সময় হেডলাইট ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করান।
৩. ফগ লাইটের ব্যবহারঃ
ঘন কুয়াশায় কিংবা বৃষ্টিতে ফগ লাইট ব্যবহার করুন। এটি আপনার দৃষ্টিসীমা বাড়াবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে।
৪. প্রয়োজনমতো হ্যাজার্ড লাইট চালুঃ
যদি আপনার গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে যায় বা অন্য কোনো কারণে রাস্তার মাঝে থামতে বাধ্য হন, তখন হ্যাজার্ড লাইট চালু করুন। এটি অন্য চালকদের সংকেত দেয় যে আপনার গাড়ি সমস্যায় পড়েছে। তবে লেন পরিবর্তন বা মোড় ঘোরার সময় সিগনাল লাইটের পরিবর্তে হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করবেন না। এটি অন্য চালকদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
যেকোন গাড়ির জন্যই হেডলাইট অত্যন্ত দরকারি জিনিস। রাস্তায় চলাচলের নিরাপত্তায় হেডলাইটের যত্ন নেওয়া বাঞ্চনীয়। যেকোন দীর্ঘ ভ্রমণ কিংবা রাতে ড্রাইভিং আগে অবশ্যই হেডলাইট ভালোভাবে দেখে নিবেন, যে এটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। হেডলাইটের আলোর সঠিক নিয়ন্ত্রণও করবেন ঠিকঠাক। খেয়াল রাখবেন, যাতে আপনার দ্বারা অন্য কেউ দুর্ঘটনায় না পড়ে।